মোঃ গোলাম মোস্তফা : মা নাসরীন রাহামান স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাসের সুযোগ পাবেন না তাই দেশটির ইউনিভার্সিটি অফ হাডারসফিল্ডের সিনিয়র লেকচারারের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন সিলেটের সৈয়দ আবিদুর রহমান। তিনি বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব শারজায় সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। সম্প্রতি আবিদুর রহমান ছুটি কাটাতে দেশে এসেছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় দেশের একটি অন্যতম দৈনিকের অফিসে এসছিলেন তিনি। যেখানে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তার জীবনের নানা গল্প। আবিদুর রহমান বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ হাডারসফিল্ডের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আবিদুর রহমান বলেন, একটু পেছন থেকে শুরু করি- 'আব্বা যখন মারা যান তখন আমার আম্মার বয়স মাত্র ৩০ বছর। তিনি চাইলেই আরেকটা বিয়ে করে সংসার করতে পারতেন। তখন আমার বয়স ছিল ১০ বছর এবং আমার বোন হুমায়রার বয়স ৫। আম্মা তার এই ছোট দুটি সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের সব সুখ বিসর্জন দিয়েছেন। আম্মা আমাদের মানুষ করতে অনেক সংগ্রাম করেছেন। আব্বাকে তো সেভাবে পাইনি, তাই আমাদের কাছে আম্মাই ছিলেন 'আব্বা ও আম্মা'। ফলে আমার জীবনে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে আম্মার কথাই প্রথমে মাথায় আসে'।
আবিদুর রহমান বলেন, 'আমি ২০২২ সালের শুরুতে ইউনিভার্সিটি অফ হাডারসফিল্ডে যোগ দেই। সে সময় আমি ওমানের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সুলতান কাবুসে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। সেই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমাই। ওমানে আম্মা, আমার স্ত্রী নায়লা শারমীন ও মেয়ে আলীয়া আমার সঙ্গেই থাকতেন। কিন্তু যুক্তরাজ্যে আমার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি মিললেও তারা আম্মাকে ভিসা দেয় না। সত্যি বলতে আমি যে ধরনের ভিসা পেয়েছিলাম তাতে বাবা মাকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। ফলে আমি যুক্তরাজ্যে না যাওয়ার কথাই ভাবছিলাম, কিন্তু আম্মার পীড়াপীড়িতেই আমাকে যুক্তরাজ্যে যেতে হলো'।
আবিদুর রহমানের যুক্তরাজ্যে যাওয়া না যাওয়ার সিদ্ধান্ত সহজ ছিল না। সেদিন তিনি স্ত্রী নায়লা শারমিনের সঙ্গে পরামর্শ করতে বসেন। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন আবিদ একাই ওমান থেকে যুক্তরাজ্য যাবেন। আর তার স্ত্রী, মা এবং মেয়ে আলীয়া দেশে ফিরবেন। আবিদ যুক্তরাজ্য গিয়ে তার মায়ের ভিসা করার চেষ্টা করবেন এবং একসাথেই তাদের নিয়ে যাবেন। হাডারসফিল্ডে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে আবিদ যোগ দেন সিনিয়র লেকচারার হিসেবে। তার জব ছিল ফুল টাইম এবং স্থায়ী সেই সাথে ছিল অবসরকালীন সুবিধাও। ফলে সব মিলিয়ে তার চাকরিটা ছিল লোভনীয়। কিন্তু আবিদ নানা চেষ্টার পর যখন মা নাসরীন রহমানের স্থায়ী ভিসা করতে ব্যর্থ হন তখন তিনি সেই চাকরি থেকে ইস্তফা নিয়ে শারজা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।
আবিদ বলেন, আমি কয়েকবছর যুক্তরাজ্যে বসবাস করলে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়ে যেতাম। আমার মেয়ে সেদেশের নাগরিক হিসেবে বড় হতো। কিন্তু আমি তো এমন সুখ চাইনি, যেখানে আমার মা সাথে থাকবেন না। আম্মা তো নিজের পুরো জীবন আমাদের জন্য সেক্রিফায়েস করলেন সেখানে আমি এটুকু করতে পারব না কেন? এই চিন্তাই সবসময় কাজ করত। তাই চাকরি ছেড়ে দেই।
এইরকম সন্তান আল্লাহপাক ঘরে ঘরে দান করুক যে কিনা আমাকে নিজের পরিবারের চেয়েও অনেক গুণ বেশি ভালোবাসে এটাই তো হওয়া উচিত আমাদের সকলের সারা দুনিয়া একদিক মা একদিন হওয়া উচিত।