মো. শিমুল শেখ রাহুল : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় ৫ই আগস্ট। সরকার পতনের পর পরই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চিত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ততকালীন সরকারের এমপি-মন্ত্রীসহ নেতারা আগে এবং পরে অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন পরিবারকে নিয়ে। আলোচিত-সমালোচিত একাধিক মানুষ অবৈধ ভাবে বিদেশে যাওয়ার পথে আটক হয়েছেন দেশের ছাত্রজনতা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। ছাত্র ও জনতার সম্মিলিত গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার গণজোয়ার শুরু হয়েছে। এদিকে গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন ভাবে হয়েছে লুটপাট ও হামলার ঘটনা।
খুলনার পার্শ্ববর্তী ভোমরা ও বেনাপোল বন্দর দিয়ে সর্বত্র খুলনা বিভাগের ১০ জেলাসহ অনান্য বিভাগের মানুষেরা ভারতে যাওয়া আসা করে। ব্যবসা-বাণিজ্যে, ভ্রমণ, চিকিৎসাসহ আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার কারণে অনেকেই ভারতে যায়। এছাড়া সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ারও প্রবণতা বেড়েছে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে।
অনান্য মাসের তুলনায় খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের চিত্র রেকর্ড পরিমাণ আবেদন জমা পড়েছে আগস্ট মাসেই। যায় প্রভাব পড়েছে খুলনার বিভাগীয় অফিসে।
সরকারের পতনের পর আগস্টের ৭ তারিখে মাত্র ১০০ আবেদনকারী পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলেও মাসের শেষ দিকে সেটা প্রতিদিন ৭ গুণ বেড়ে যায়। যার কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে অফিস কর্তৃপক্ষকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অফিসের কার্যক্রম ও সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও নিয়মিত পাসপোর্ট অফিসে আসছেন খোঁজ খবর নেওয়ায় দালাল বা বহিরাগতদের দৌরাত্ম সংখ্যাও বহুলাংশে কমেছে।
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো পাসপোর্ট অফিসের প্রবেশদ্বারে ভ্রাম্যমাণ মোটরসাইকেল গ্যারেজে দালালের একটি বড় চক্র নিয়মিত নানা রকম ছদ্মবেশে ব্যবসা করছে। আবেদন ফরম পূরণ থেকে শুরু করে ছবি তোলার লাইনে বিশেষ সুযোগ দেওয়ার আশ্বাসে তাঁরা টাকা লুট করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনেকে ধারণা করছেন তাঁরা এখনও পূর্বের মতো দুর্নীতির বেড়াজালে বন্দী।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ভোরে নগরীর বৈকালী পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে সরজমিনে দেখা যায়, পাসপোর্ট আবেদনকারীদের দীর্ঘ লাইন খুলনা-যশোর পুরাতন সড়ক অবধি চলে আসছে। সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা সাদা পোশাকে আবেদনকারীদের কৌশলে ও অবৈধভাবে সিরিয়ালের ব্যবস্থা করছেন। খুলনায় অফিসিয়াল ভাবে পাসপোর্টের আবেদন সকাল সাড়ে ৯ ঘটিকা থেকে ২টা পর্যন্ত নেওয়া হলেও আবেদনের চাপ তুলনা মূলক বেড়ে যাওয়ার কারণে সেটা ৯ ঘটিকা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত করা হয়েছে। সকালের শিরোনামকে এমনটি নিশ্চিত করেছে খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট পরিচালক মোঃ আবু সাঈদ। উদ্বেগের বিষয় হলো পাসপোর্ট অফিস নিরাপত্তায় রয়েছে মাত্র ৪ জন সাদা পোশাকধারী আনসার সদস্য। খুলনা পাসপোর্ট অফিসের ২৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী দিয়েই এই চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ খানিকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে আরও জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৬০০০ আবেদন করে, ফেব্রয়ারি মাসে ৬২০০, মার্চ মাসে ৫৬০০, এপ্রিল মাসে ৪৬০০, মে মাসে ৫২০০, জুন মাসে ৪৩০০, জুলাই মাসে ৫৩০০ এবং আগস্ট মাসে প্রায় ৭২০০ পাসপোর্টের নতুন আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে আগস্টের ৫ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত ১৫০০ আবেদন পড়লেও শেষ ১৫ দিনেই জমা পড়েছে অন্তত সাড়ে ৫ হাজার আবেদন। বিশেষ করে ২১শে আগস্টের পর থেকে প্রতিদিন গড় ৭০০ টির বেশি আবেদন জমা পড়েছে পাসপোর্ট অফিসে।
খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মোঃ আবু সাইদ জানান, '৫ই আগস্টের পর আবেদনকারী অনেক কম হলেও ১৫ই আগস্টের পর এটার পরিমাণ অনেক গুণ বেড়েছে। বর্তমানে এই চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা অফিসের সময়সূচি পরিবর্তনের পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। সকলকে বৈধভাবে সেবা প্রদান করতে আমরা বদ্ধপরিকর। দালালের বিষয়ে তিনি খোঁজ নিয়ে প্রশাসনকে অবহিত করবেন'। তিনি আরও বলেন, 'খুলনা অফিসে একদিনে ৮০০ থেকে ৯০০ আবেদন কখনই পড়েনি। আবেদনকারীদের মধ্যে সনাতন ধর্ম, নারী এবং পুরুষের সংখ্যা বেশি হলে জানান তিনি।