মো. মিলন হক : শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করতে চাইলে সকল প্রকার ব্যক্তিগত/ বেসরকারি প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুল গুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। একটি গাছের যেমন শিকড় বা গোঁড়া ছাড়া টিকে থাকা অসম্ভব তেমন একজন শিশুর প্রাথমিক পর্যায়ে ভালো শিক্ষা ছাড়া সফলতা অর্জন সম্ভব নেই। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় বর্তমান সময়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে মনে হচ্ছে, শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৫০ জন ছেলে মেয়েও পড়ে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, যারা স্বচ্ছল পরিবার তারা সবাই তাদের সন্তানদের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান গুলোতে ভর্তি করায়। অপরদিকে যারা দুঃস্থ পরিবারের ছেলে মেয়ে তাঁরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে পড়ে ঠিক,কিন্তু শিক্ষকেরা তাদের প্রতি তেমন গুরুত্ব দেয় না। ফলশ্রুতিতে,আমাদের দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে ছেলে মেয়ে খুবই নগণ্য।আমাদের দেশে এমন একজনও শিক্ষিত মানুষ পাওয়া যাবে না, যে তারা তাদের বাচ্চাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছে! যার প্রেক্ষাপটে,দরিদ্র পরিবারে ছেলে মেয়েদের স্যার মেডামরা গুরুত্ব দেয় না। একজন দরিদ্র পরিবারের সন্তানের স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনাশ হয়।
একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করে না।বিধায় অনেক মানুষ ছেলে মেয়েদের বাধ্য হয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ,ব্যক্তিগত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোতে পড়াচ্ছে। একজন শিক্ষকের জীবনের প্রধান কাজ হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়া কিন্তু বর্তমান খুব কম শিক্ষক তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে। একজন শিক্ষক বাবা মায়ের সমপর্যায়ে শ্রাদ্ধার পাত্র। অথচ কিছু শিক্ষকের অবহেলার জন্য দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা অগ্রসর হতে পাচ্ছে না!
বই মানুষের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করে।বই মানুষের মনোজগতের মধ্যে আলোর স্ফূঃরণ ঘটায়। একজন মানুষের দক্ষতা অর্জনের হাতিয়ার হচ্ছে বই কিন্তু বর্তমান সময়ের বিভিন্ন বইয়ে এমন কিছু ভাষা থাকে যা মানুষের স্বভাব ও আচরণ বহির্ভূত।এসব ভাষা পরিহার করা জরুরী । বর্তমান বই গুলোতে নীতি ও নৈতিকতা বিবর্জিত অনেক কথা আছে, যেগুলোর সংস্কার অপরিহার্য। ছেলে-মেয়েদের নৈতিকতা বিষয় শিক্ষা দেওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। ছেলে-মেয়েদের মধ্যে নৈতিকতার বিষয় লোপ পাচ্ছে। যা একটি সুশীল সমাজে কখনো কাম্য নয়। নৈতিকতা না থাকলে একটি সমাজ কখনো উন্নতির শিখরে অবস্থান করতে পারে না। সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি হবে।
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা ক্ষেত্রকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। একজন ছেলে মেয়ে পড়াশোনা করে তার স্মৃতিতে উক্ত পড়াশোনা কতটা ধারণ করতে পেরেছে তা বুঝার কৌশল হচ্ছে পরীক্ষা।সেই পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মানুষের জীবন যদি একটা পরীক্ষা ক্ষেত্র। তাহলে অবশ্যই একজন ছেলে মেয়ে কে পরীক্ষার মাধ্যমে যেতে হয়। বর্তমান সময়ে এসাইনমেন্ট এর ব্যবস্থা ও বই দেখে পরীক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ বিনাশ করেছে।
ব্যক্তিগত বা বেসরকারি যত ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সব গুলোই হচ্ছে শিক্ষার নামে এক একটি ব্যবসা।আর এই ব্যবসা হচ্ছে ব্রেইন ব্যবসা নামেও পরিচিত।যে প্রতিষ্ঠান যত রকমে একজন মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারে, সেই প্রতিষ্ঠান তত চলে বেশি। শহরে অলিতে গলিতে পাওয়া যায় কোচিং সেন্টারের ব্যবসা।যা কিছু শিক্ষকের অবহেলার কারণে গড়ে ওঠে। উনারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করায়। একজন বাবা তার ছেলে মেয়েদের কোচিং বা টিউশন দিতে বাধ্য হয়। আবার কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান দেখা যাচ্ছে, পিছিয়ে পড়ছে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ সুবিধা থেকে। এসব পিছিয়ে পড়ার জন্য অন্যতম দায়ী হচ্ছে দুর্নীতি।
অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে রাজনীতি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোন রাজনীতির জায়গা নই! শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে একজন ছাত্র ছাত্রীর জন্য উপসানায়। মানুষ উপসানালয়ে গিয়ে যেমন রোজ প্রার্থনা করে তেমন একজন শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রতিদিন পড়াশোনা করে।এই রাজনীতির জন্য অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত, লাঞ্চিত,নিগৃহীত নিষ্পেষিত হচ্ছে। একটি অসুস্থ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে জাতির ভবিষ্যৎ ভালো কিছু আসা করা যায় না। একটি সুস্থ শিক্ষা ব্যবস্থায় পারে একটি সুন্দর ও জাতি গঠন করতে। শিক্ষা সংস্কার জরুরী।