মো. শিমুল শেখ রাহুল : সরকার পতনের পর সারা দেশে কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও উপাচার্যসহ পদত্যাগের জন্য শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, বিভিন্ন ধরনের স্লোগান ও আন্দোলন করছে। উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করেছে। কিন্তু সেখানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন পদত্যাগের গুঞ্জন উঠা মাত্রই শিক্ষার্থীরা তাঁকে স্বপদে বহাল থাকার জন্য প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে অনুরোধ করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
আজ মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১২টায় শিক্ষার্থীদের সামনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। তাঁর পদত্যাগে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলোজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন গত ২৫ মে, ২০২১ সালে ভিসি হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর যোগদানের পর দূরদর্শী কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাগ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে স্বস্তির পূর্বাভাস লক্ষ্য করা যায় বলে অনেকে দাবী করে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এই পদত্যাগ সহজভাবে কেউ নিচ্ছে না। অনেক ধারণা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিনা মেঘে বজ্রপাত। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত এবং সাবেক অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের হতাশার চিহ্ন দেখা গেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগের পরপরই সারাদেশে কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ অনেকের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীদের দাবি বা শ্লোগান, অবরুদ্ধ রাখা, কার্যালয়ে তালা বন্ধ রাখার মতো ঘটনা ঘটলেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী। সাবেক ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা মনে করে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও তার কাজের পরিচ্ছন্নতা, সততা ও শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় সবাই আশাপূর্ণ ও সন্তুষ্ট ছিলেন। কেবল বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের চোখে তিনি ছিলেন ক্লিন ইমেজের। তার সঙ্গে উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারও ছিলেন ক্লিন ইমেজের। তাঁদের কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। বলা চলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশেই রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ উপাচার্যের পদত্যাগের খবরে বিশ্ববিদ্যালয় যেন শোকের ছায়া ও হতাশার ছায়া নেমে এসেছে।
পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার আগে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলেন। তাঁর বক্তব্যে বলেন, 'সবকিছু মিলিয়ে আমার পক্ষে আর থাকা সম্ভব না। গতকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় যে লেখালেখি শুরু হয়েছে, তাতে আমার সম্মানহানি হচ্ছে। আমি সম্মানহানি আর নিতে পারছি না। সবকিছুর আগে আমার সম্মান, আমাকে শান্তিতে থাকতে দাও। আমি চাই না তোমরা আর কোনো ধরনের কিছু করো। তোমরা সবাই ক্লাসে ফিরে যাও।